বৃদ্ধ বাবাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামে।
বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতনের সেই ঘটনার ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ছবিতে দেখা যায়, বাড়ি থেকে বাবাকে টেনেহিঁচড়ে জবরদস্তি করে রাস্তায় উঠাচ্ছে তারই ছেলে। হাত ধরে করছে টানাহেঁচড়া। পিঠ ও ঘাড় ধরে একের পর এক ধাক্কা দিতেই থাকে। গায়ের গেঞ্জিটাও টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলে।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বাবার নাম দেলোয়ার ফরাজী (৭০)। আর নির্যাতনকারী ছেলে হলো ফিরোজ ফরাজী। তাদের বাড়ি দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামে। গত ১৪ জুন সকাল ৮টায় তাদের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাবা দেলোয়ার ফরাজী বাদী হয়ে তিন ছেলে এবং এক পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
এদিকে শুক্রবার রাঙ্গাবালী থানায় পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে আরেকটি মামলা হয়।
পুলিশের তথ্যমতে, ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের নজরে এলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় রাঙ্গাবালী থানার ওসিকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলমাছ ফরাজী ও আজমল ফরাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে প্রধান অভিযুক্ত ফিরোজ ফরাজী পলাতক রয়েছে। তাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৫-১৬ বছর আগে দেলোয়ার ফরাজী তার স্ত্রী রওশনা বেগমের নামে সব জমিজমা লিখে দেন। তিন বছর আগে হারুন ফরাজী নামের এক ছেলেকে বঞ্চিত করে ফিরোজ, আলমাছ ও আজমলের নামে সেই জমি দলিল করে দেন তাদের মা। এ জমিজমা নিয়েই তিন ভাইয়ের সঙ্গে হারুনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
ওই ঘটনার আগে থেকেই হারুনের ঘরে বসবাস করতেন তার বাবা। ফলে অন্য তিন ছেলের সঙ্গে বাবার দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং বাবার ভরণপোষণও দিচ্ছিলেন না তারা। প্রতিবেশীরা বলছেন, ওই দিন মহিষ চোর বলায় বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাণ্ড ঘটায় ছেলে।
নির্যাতনের শিকার দেলোয়ার ফরাজী বলেন, হারুনের ঘরে অনেক বছর ধরে আমি থাকি। জমির ঝামেলায় আমার অন্য ছেলেরা তা পছন্দ করে না। আমাকে তারা ভরণপোষণও দেয় না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে। ওই দিন ফিরোজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য অনেক মেরেছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনো দাগ আছে। তিনি বলেন- আরেক ছেলে আজমলও খারাইয়া থাইক্কা কয়- হালারপো হালারে পিডা। পোলার (ছেলে) বউ নাজমা ডাক দিয়ে কয় পরিষদে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, জমিজমা ছাড়া আরও দ্বন্দ্ব আছে। পোলার বউ নাজমার সঙ্গে হারুনের বউও মেম্বারি নির্বাচন করতে চায়। এজন্য আমারে মারপিট করছে।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় রাঙ্গাবালী ও পটুয়াখালী থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। ফিরোজকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com