জয়পুরহাটের কালাইয়ে মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের রাখা সংরক্ষিত আলু এম ইসরাত হিমাগারে ব্যবস্থাপক রাইহান আলী গোপনে বিক্রয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সংরক্ষিত আলুর বস্তা খুলে আলু বের করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাদের সংরক্ষিত আলু ফেরত পেতে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা একত্রিত হয়ে বুধবার দুপুরে ওই হিমাগারের মুল ফটকে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছে। তবে ওই সময় কালাই থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
ব্যবসায়ী ও কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগারের ব্যবস্থাপক রাইহান আলী প্রতারণা করে তাদের না জানিয়ে হিমাগারে রাখা হাজার হাজার বস্তা আলু বিক্রয় করেছে। তবে হিমাগার কর্তৃপক্ষ তাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবী, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেই তাদের সংরক্ষিত আলু বিক্রি করা হয়েছে। আর বস্তা থেকে আলু খুলে নেওয়া হয়নি বরং আলু নষ্ট হওয়ার কারণে কমে গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে উপজেলার সরাইল গ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল ফকির, আঁওড়া গ্রামের কৃষক মেজবাহুল ইসলাম, বিনইল গ্রামের কৃষক তোতা মিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু ক্রয় করে লাভের আশায় কালাই পৌরশহর এলাকায় অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগারে সংরক্ষণ করেন।
বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের সংরক্ষিত আলু বিক্রি করেন নাই। বর্তমানে আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের সংরক্ষিত আলু বিক্রির জন্য হিমাগারে যায়। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন হিমাগারের ব্যবস্থাপক রাইহান আলী সংরক্ষিত আলু তাদের না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়াও হিমাগারের শ্রমিকদের সাথে যোগসাজস করে ওই কর্মকর্তা সংরক্ষিত ৭০ কেজির বস্তা খুলে প্রত্যেক বস্তা থেকে ২৫/৩০ কেজি করে আলু বাহির করে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে আলুর মালিকরা ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলতে গেলে গত মঙ্গলবার সকালে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির মত ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র হিমাগার কর্তৃপক্ষ এবং আলুর মালিকরা কালাই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এরই জের ধরে বুধবার দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের কালাই পৌরশহরে অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগারের ভিতরে এবং সামনে ভুক্তভোগী আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা তাদের আলু ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সরাইল গ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল ফকির বলেন, মৌসুমের শুরুতে এম ইসরাত হিমাগারে ৭০ কেজি ওজনের মোট ৩৭৭০ বস্তা বিভিন্ন জাতের আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আমাকে না জানিয়ে এর মধ্যে ২১৭২ বস্তা আলু হিমাগারের ব্যবস্থাপক রাইহান আলী বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে গেলে উল্টো সে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আলু ফেরত পেতে আমি থানায় অভিযোগ করেছি।
উপজেলার বিনইল গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, ওই হিমাগারে আমি ১১৭০ বস্তা বীজ আলু রেখেছি। সামনে আলু রোপনের সময় আসছে, তাই আলু ওঠাতে গিয়ে দেখি ব্যবস্থাপক রাইহান আলী আমার সব আলু বিক্রি করে দিয়েছে। আলু ফেরত পেতে আমিও থানায় অভিযোগ করেছি। এ সময় আলু ফেরত না পেলে কি রোপণ করবো সেটাই ভাবছি। এখন সবার চেয়ে বিপদ বেশী আমার। ওই ব্যবস্থাপকের কঠিন বিচার হওয়া দরকার।
ব্যবসায়ী ও কালাই পৌরসভার কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বলেন, এর আগেও ওই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। স্থানীয় লোকজনদের রেখে ব্যবস্থাপক রাইহান আলী শ্রমিকদের সাথে যোগসাজশ করে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সংরক্ষিত আলুর বস্তা খুলে আলু বাহির করে এভাবেই বিক্রি করে আসছেন। এর ভাগ স্থানীয় লোকজন এবং শ্রমিকদের দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। ওদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেন না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
এম ইসরাত হিমাগারের কোষাধ্যক্ষ বদিউজ্জামান বলেন, বস্তা থেকে আলু বাহির করে নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা একেবারেই মিথ্যা। যেসব বস্তায় আলু ভর্তি করে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সেসব বস্তা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে আলু পড়ে গেছে, আবার অনেক বস্তায় আলু নষ্ট হয়েছে। আলুর মালিকরা অভিযোগ করার পর তা পূরুণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা হিমাগারের লোকজনদের মারপিট করেছে এবং হিমাগারের ভিতরে এসে বিক্ষোভও করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com