কুড়িগ্রামে পশুর হাট-বাজার বসাতে গিয়ে অবমাননা করা হচ্ছে শহীদ মিনারের বেদীকে। সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতারা অবলিলায় জুতো পায়ে উঠছেন এসব বেদীতে। এছাড়াও বেদীগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে পশু উঠা নামার কাজে। কেউ কেউ বসিয়েছেন পান সিগারেটের দোকান। এমন অবমাননাকর পরিস্থিতি বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘটলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। এগুলো হাট-বাজার কমিটির তদারকি করা উচিত ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে খবর দিয়েছি। পরবর্তীতে এরকম ঘটনা ঘটারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিকেলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়। চরমভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে শহীদ মিনারের বেদী। এই হাটে অবস্থিত ভাষা শহীদদের বেদীতে একজন বাদাম এবং অপর দুজন বসিয়েছে পান সিগারেটের দোকান। সেখানে প্রায় কুড়িজন মানুষ স্যান্ডেল পায়ে অবস্থান নিয়েছে।
এদের একজনকে অববাননার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাবারে জায়গা নাই, সগাইগুলা বসছে। মুইও আসি বসছং। মোর ভুল হয়া গেইছে বাবা।’
ছাগল কিনে শহীদ মিনার উপর দাঁড়িয়ে থাকা শহিদুল আলম বলেন, পরিবশেটাই এমন। আসলে এটা আমাদের ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাষা শহীদদের প্রতি অমর্যাদা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জব্বার মিয়া নামের এক গরু বিক্রেতা উচ্চস্বরে বলেন বললেন, হাটোত জাগা নাই, কিসের তোমার শহীদ মিনার-টিনার। ওগলা দেখার হামার টাইম নাই।
অপরদিকে একই দিনে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কচাকাটা থানার কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভটির সামনের বেদীতে ট্রাকে গরু উঠানো নামানোর কাজে ব্যবহার করছে গরু ব্যবসায়ীরা। এতে বেদীর উপর গরু মানুষের উঠা নামা এবং গরুর গোবর দিয়ে বেদীসহ বিজয় স্তম্ভটি নোংরায় পরিণত হয়। বেদীটি ক্ষতিগ্রস্থ হবারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এখানকার শামসুল মিয়া নামে একজন ক্রেতা জানান, শত শত মানুষের সামনে প্রকাশ্যে ট্রাক লাগিয়ে, পায়ে মাড়িয়ে গরু তোলার কাজে বিজয় স্তম্ভের বেদী ব্যবহার এটা স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভের অবমাননা। প্রতিদিন এই হাটে শতাধিক গরু বেচা কেনা হয়ে থাকে। গরু ওঠানোর কাজে বিজয় স্তম্ভের বেদী ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান এবং কচাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান জানান, তার ১২টি এবং আতাউর রহমানের তিনটি গরু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকটি ভাড়া করা হয়েছে। ইটের গাথা এই স্থানটি উঁচু গরু তুলতে সুবিধা তাই ট্রাক এখানে লাগানো হয়েছে। এই স্থানের অর্থ আমরা বুঝতে পারি নাই।
এ বিষয়ে আতাউর রহমান বলেন, তিনি তিনটি গরু ঢাকায় তার আত্মীয়ের বাসায় পাঠাবেন বলে এই ট্রাকে দিতে এসেছেন। তিনি আসার আগেই ট্রাকটি বেদীতে লাগিয়ে গরু তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আসলে এখানকার কেউ এই স্তম্ভের মর্ম বুঝতে পারেনি।
কচাকাটা জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ মমিনুল ইসলাম জানান, বিজয় স্তম্ভের বেদী ব্যবহার করে ট্রাকে গরু উঠানো বিষয়টি হৃদয় বিদারক। সেখানে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরাও ছিলো। কেউ নিষেধ করার ছিলো না। পরে সংবাদ পেয়ে আমরা কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেই এবং ট্রাকটি সরিয়ে দেই। পরে ব্যবসায়ীদের বেদীসহ পুরো চত্তর পরিস্কার করে দিতে বলি।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফয়জার রহমান বলেন, শহীদ মিনারে জুতা, স্যান্ডেল পড়ে ওঠা এটা জাতিকে অপমান করা। হাট এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে-এ-জান্নাত রুমি বলেন, আমাকে কেউ জানায়নি। এইমাত্র শুনলাম। শহীদ মিনারের সম্মান ক্ষুন্ন করতে না পারে এজন্য আমি উদ্যোগ নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com