ব্রেকিং নিউজ

x


হাজীগঞ্জে সরকারে সাথে প্রতারণা করে গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা চলছে

শনিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২০ | ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

 

নেই ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, নেই ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্সের কোন কাগজপত্র। সর্বোপরি নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি অর্থাৎ সরকারি অনুমোদন। আবার নেই চিকিৎসক, নেই প্রয়োজনীয় নার্স, টেকনেশিয়ানসহ দরকারী জনবল। তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই দিব্যি চলছে রোগীর চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার নামে চিকিৎসা বাণিজ্য।
বলছি, হাজীগঞ্জ উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চেঙ্গাতলী বাজারের গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা। এই হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চেঙ্গাতলী বাজারের মেইন রোডে আজাদ বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিনিয়ত সেবার নামে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এই হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে।
প্রিয় পাঠক, প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে রোগী দেখছেন কে? হ্যাঁ বলছি, ওই হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মো. এনামুজ্জামান হাসিব প্রকাশ হাসিব স্যার নামের আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সি একজন ব্যক্তি রয়েছেন। হাসপাতালের নার্স ও রোগীরা বলছেন, তিনিই নাকি রোগী দেখেন। যার প্রমাণও পাওয়া গেছে একজন রোগীর বক্তব্যে। কিন্তু হাসিব সাহেব নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিলেন না।
সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনকালে তিনি (এনামুজ্জামান হাসিব), একবার হাসপাতালের মালিক পরিচয় দিলেন, আবার অস্বীকার করে বললেন, মালিক ঢাকায় থাকেন তিনি হাসপাতালটি দেখা-শুনা করছেন। কিছুক্ষণ পর আবার নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলেন। আবার তিনিই উপজেলা স্যানেটারী কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ্ সরকারি অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা জন্য গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। যার স্মারক নং- সি,এস/চাঁদ/শা-১/২০/১৩১৬। পত্র জারির (শোকজ) ১০ দিনের মধ্যে উপযুক্ত কারণ দর্শানোসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্ব-পক্ষে কাগজপত্রাদি (অনলাইন আবেদন কপিসহ) দাখিলের কথা উল্লেখ থাকলেও গত দুই মাসে তা দাখিল করা হয়নি।
সম্প্রতি পরিদর্শন করে দেখা যায়, গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সামনে কলাপসিবল গেটে সাঁটানো কাগজে লেখা আছে বিজ্ঞপ্তি এই হসপিটালের ডাক্তার ভিতরে আছেন, জরুরি প্রয়োজনে ফোন করুন (তিনটি ফোন নম্বর উল্লেখিত)। প্রকৃতপক্ষে কোন চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা স্যানেটারী পরিদর্শক দুই দিন ভিজিট করেছেন, তাঁরাও কোন চিকিৎসক দেখতে পায়নি বলে জানান।
হাসিব সাহেবের রুমের কাঁচের দরজায় ডা. ফাতেমা খাতুন, ডা. মো. জাব্বার আলী, ডা. এ. কে আজাদ ও ডা. এএম শাহজাহান চিকিৎসকের নাম ও রোগী দেখার সময় উল্লেখপূর্বক তালিকা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা (চিকিৎসক) একদিনের জন্যও আসেননি। হাসিব সাহেব এই সংবাদের প্রতিবেদক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানালেন, ডাক্তারদের সাথে কথা হয়েছে, তারা আসবেন। কিন্তু দিন বা তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না।
অথচ এই গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জরুরি বিভাগ, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও প্রসূতি, অর্থোপেডিক, ইউরোলজী, মা ও শিশু, নাক, কান ও গলা, বক্ষব্যাধী ও হৃদরোগ, সিজার, ডিজিটাল এক্সরে, নরমাল ডেলিভারী, চর্ম, যৌন ও এলার্জী, মুসলমানী, সব ধরনের অপারেশন, ডায়াবেটিস, কালার আল্ট্রাসনোগ্রাম, ১২ চ্যানেল ডিজিটাল ইসিজি সেবা দেয়া হয়।
এছাড়া এনালাইজার ডিজিটাল মেশিনে প্যাথলজিক্যাল সব ধরনের নির্ভূল পরীক্ষা করা হয়। রয়েছে এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। আবার সকল পরীক্ষায় ২০% ছাড়। যা হসপিটালের দেয়ালে সাঁটানো ব্যানার ও ভিজিটিং কার্ড সূত্রে জানা গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই সেবাগুলো দেয় কে…? হাসপাতালে এনামুজ্জামান হাসিব ওরফে হাসিব স্যার ও দুইজন নার্স ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
তিন মাসের মধ্যে হাসপাতালটি ছেড়ে দেয়া হবে উল্লেখ করে এনামুজ্জামান হাসিব বলেন, হাসপাতালটি ছেড়ে দেবো, তাই কাগজপত্র করা হয়নি। অথচ এই প্রতিবেদকের সরেজমিন পরিদর্শনকালীন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে, উল্লেখ করে অটোরিক্সা যোগে মাইকিং করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি এনামুজ্জামান হাসিব।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্যানেটারী পরিদর্শক শামসুল ইসলাম রমিজ বলেন, আমি দু’বার গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেছি। তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বরং আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংবাদিক পরিচয়সহ বিভিন্ন কথা বলে আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
একইভাবে এই প্রতিবেদকসহ উপস্থিত অন্যান্য সংবাদকর্মীদেরও সহকর্মী (সাংবাদিক) পরিচয় দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম সোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, আমি নিজেও গ্রীন ল্যাব হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেছি। তারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোন ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে শোকজও করা হয়েছে। তারও জবাব দেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ্ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে আসলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২০

protidin-somoy.com |

Development by: webnewsdesign.com