একজন অসহায় মায়ের নাম রেইনা ম্যা নাসিনো! গত জুলাই মাসে ফিলিপিন্সের কারাগারে যার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। কিন্তু জন্মের কয়েকদিন পরই জেল কর্তৃপক্ষ নাসিনোর কাছ কেড়ে নেয় তার শিশু কন্যাকে। আর রেখে আসে নাসিনোর মায়ের কাছে। জন্মের পর মায়ের ওপর শিশুর যে মানবিক অধিকার, সেখান থেকে বঞ্চিত করা হয়। আর মা বঞ্চিত হয় শিশুর লালন-পালনের অধিকার থেকে।
এর কয়েকদিন পর খবর আসে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। করোনার দু:সময়ে মা-সন্তানের পুনর্মিলনের জন্য মানবিক বিবেচনায় কারামুক্তির আবেদন করেন নাসিনো। কিন্তু নাসিনোর আবেদনে সাড়া দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মুক্তিও মেলেনি নাসিনোর! ফলে জীবিত অবস্থায় আর সাক্ষাত হয়নি মা-মেয়ের!
সেদিন মৃত্যুর খবর আসে প্রাণের প্রিয় শিশু কন্যা রিভারের! জেল কর্তৃপক্ষই দিয়েছে এ খবর।
গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় তিন মাসের শিশুর শেষকৃত্যে অনুষ্ঠান। সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় নাসিনোকে। কিন্তু খোলা হয়নি তার হাতকড়া। পরানো হয় করোনাভাইরাসের নিরাপত্তাজনিত সকল ধরনের পোশাক। কফিনে মেয়ের মৃত লাশ দেখে আর্তনাদ করে উঠেন নাসিনো। শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েন তিনি। পুলিশি বাধায় মেয়েকে ছুঁয়ে দেখতে ব্যর্থ হন নাসিনো।
করোনাভাইরাসের অজুহাতে শিশু কন্যার লাশ ছুঁয়ে দেখতে দেওয়া হয়নি একজন মাকে!
আমাদের একসাথে থাকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি তোমার হাসিও দেখতে পাইনি’- তিন মাসের মেয়ে রিভার এর সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন ২৩ বছর বয়সী নাসিনো!
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ উঠেছে ফিলিপিন্সজুড়ে। মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা বিক্ষোভ করেছে এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে। শিশু কন্যার শেষকৃত্যেও মায়ের হাতকড়া না খোলা এবং এমন দু:সহ সময়ে নাসিনোর চারপাশে সশস্ত্র পুলিশি পাহারার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে চারদিকে।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক মানবাধিকার কর্মী নাসিনোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে মিছিলে অংশ নেন। তবে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কফিনটি দ্রুতবেগে নিয়ে যাওয়া হয় দাফনের জন্য।
নাসিনোর মায়ের অভিযোগ, অত্যন্ত অমানবিক ও কষ্টের ঘটনা। আমার নাতনির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও ঠিকভাবে করতে পারলাম না। তার পছন্দের সংগীতও বাজাতে দেয়া হয়নি!
রেইনা ম্যা নাসিনো ফিলিপিন্সের আর্বান পভার্টি গ্রুপ কদমের সক্রিয় সদস্য। ২০১৯ সালের নভেম্বরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহণ করার অভিযোগে আরও দু’জনের সঙ্গে নাসিনোকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছিলেন!
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com