ছাত্রলীগের আনন্দ শোভাযাত্রায় দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের এক ডজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বিদেশি অতিথিদের আগমনকে স্বাগত জানাতে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
তবে দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে শোভাযাত্রাটি করতে পারেনি ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনার পিছনে রয়েছে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন। তারা বলছেন, মূলত ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে শীর্ষ পদের দৌড়ে রয়েছেন অনেকেই। ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হুসাইনও রয়েছেন। বয়স জটিলতায় বাদ পড়তে পারেন এমন আশঙ্কায় দ্রুত সম্মেলনের জন্য শহীদ মিনারে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা জানান।
তবে আগামী সম্মেলনকে ঘিরে মারামারি এ ঘটনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন সাদ্দাম।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কর্মসূচি ছিল। এ সময় বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। ৩টার দিকে অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেমের শব্দ বাড়ানো-কমানো নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় এক ডজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের অভিযোগ, সাদ্দাম হোসেনের উপস্থিতিতে তার অনুসারীরা প্রথমে হামলা করে। এতে তিনিসহ মহানগর দক্ষিণের সাত -আটজন আহত হন।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রোগ্রাম সফল করার জন্য সাউন্ডসিস্টেম ভাড়া করি। প্রোগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে সাউন্ডসিস্টেমে গান চলছিল। ঠিক সেসময় মহানগরে কিছু নেতাকর্মী তা বন্ধকরতে বলে তখন তাদের সাথে আমাদের ছেলেদের ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। তারা ঢাবি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। আমরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ করব।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আমরা কর্মসূচির শুরুতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হই। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে স্লোগান দেই। তখন আমরা ডেকোরেটরের দায়িত্বে থাকা কয়েকজনকে সাউন্ড সিস্টেমের শব্দ কমাতে বলি। কিন্তু এতে বাধা দেয় সাদ্দাম হোসেনের সমর্থকরা। এক পর্যায়ে তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আমিও এই হামলায় আহত হই।’
জুবায়ের আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ। তাদের নেতাকর্মী কম। তবুও আমরা যে কোনো কর্মসূচিতে তাদেরকে প্রাধন্য দেই। কিন্তু তারা সেই সুযোগ বারবার নিয়ে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, হামলাকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলে। এবং সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট করে দেয়।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সংঘর্ষের পর বিষয়টি মীমাংসা করতে যান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঘটনাটির সুরাহা করতে পারেননি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ঢাবি ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার পায়তারা করছে। তারা চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনের কারণ হিসেবে তারা বলেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বয়স প্রায় শেষের দিকে তাই এখন যদি সম্মেলন না করতে পারে তবে তিনি সম্মেলনে অংশ নিতে পারবেন না।
এ বিষয়টি ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা নীতি গর্হিত অপ্রসাঙ্গিক। শুধুমাত্র দোষ ঢাকার চেষ্টা।
উল্লেখ্য, এর আগে কয়েকবার ঢাবি ছাত্রলীগের কাছে নিপীড়নের শিকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ধানমন্ডি ৩২ এ জাতির পিতার ফুল দিতে গিয়ে শরীরে সাথে লাগায় ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি থাপ্পর দেন কেন্দ্রীয় এক নেতাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন: আমাদের কয়েকটি ভাগে কর্মসূচি ছিল। সব শেষ করে বিষয়টি নিয়ে বসব।
বাংলাদেশ সময়: ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com