সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে স্থানীয় এক রাজাকারের নামফলক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দলপুর ইউনিয়নের বাখেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে।
বাখেরা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই গ্রাম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অত্যাচার-নির্যাতন চালান রাজাকার জব্বার মোল্যা ওরফে জব্বার সরদার, তার ভাই আবেদ আলী, রাশেদ মোল্যা, বিলাত আলী সরদারসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। স্বাধীনতার পর তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে সুবিধামতো সময়ে তারা আবার এলাকায় ফিরে আসেন। স্থানীয়দের কাছে এখনও তারা রাজাকার হিসেবেই পরিচিত। জব্বার মোল্যার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা নিজেদের দুর্নাম ঢাকতে নানা চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
তিন বছর আগে স্থানীয়দের অনুদানে বাখেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। ওই শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ বেদির ডান পাশে একটি ফলকে উদ্বোধক হিসেবে সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হোসেন মোল্যার নাম আছে। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছে মসফেকুর রহমানের নাম। বেদির বাম দিকে আরেকটি ফলকে লেখা আছে, ‘সৌজন্যে: আকরাম হুসাইন, পিতা: মৃত আ. জব্বার মোল্যা।
ওই পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শহীদ মিনারে আকরাম ও তার বাবা জব্বার মোল্যার নাম লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
জব্বার মোল্যার পরিবারের সদস্যরা আগে অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক থাকলেও সম্প্রতি সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসফেকুর রহমান মিল্টনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে দলে যোগ দেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে মসফেকুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মাগুরা জেলা শাখার নাট্য সম্পাদক মো. আল আমীন বলেন, ‘শহীদ মিনারে রাজাকারের নামফলক থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য যাচ্ছে। আমরা দ্রুত এ নামফলকের অপসারণ চাই।
তবে সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হোসেন মোল্যা দাবি করেছেন, শহীদ মিনারে তার নামের পাশাপাশি একজন রাজাকারের নাম থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। রাতের আঁধারে কেউ শহীদ মিনারে রাজাকারের নাম লিখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শহীদ মিনারে রাজাকারের নামফলক স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. ইকরাম আলী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের ওপর অত্যাচার- নির্যাতন করার কারণে জব্বারের পরিবার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত। শহীদ মিনারে তাদের নামফলকে স্থাপন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত কষ্টের। আমরা দ্রুত এ নামফলক অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে সব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসফেকুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘শহীদ মিনার উদ্বোধনের সময় সেখানে কোনো নামফলক ছিল না। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ নামফলক লাগিয়েছে। আমরা ফলকটি তুলে ফেলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।
বাখেরা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান শেখ বলেন, ‘ঢাকার ব্যবসায়ী আকরাম হুসাইনের ভাই জসিম উদ্দিন স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আকরাম হুসাইনের অনুদানের ৪০ হাজার টাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে জব্বার মোল্যার নামফলক নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে কালো কালি দিয়ে নাম ঢেকে দেওয়া হয়। শনিবার দিবাগত রাতে কে বা কারা শহীদ মিনারে স্থাপিত দুটি নামফলক ভেঙে নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত রাজাকার মৃত জব্বার মোল্যার ছেলে ও বাখেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। শুনেছি, আমাদের বড় গোষ্ঠীর কিছু মানুষের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার দায় আমার বাবার ওপর চাপানো হয়। স্কুল মাঠে শহীদ মিনার না থাকায় এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাইয়ের অনুদানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার উদ্বোধন হলে তখন কেউ কিছু বলেননি। অথচ, এখন বিতর্ক হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com