মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলে কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মন্জুর হোসেন রিপন। জেলে কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু ইউপি সদস্য ও স্থানীয় সোলাইমান সরকার নামে এক ব্যক্তি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি সোলাইমান সরকার।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়নে জেলে কার্ডধারি ৫০১ জন জেলে রয়েছে।
চলতি বছরে ৫০১ জন জেলের মধ্যে গত মার্চ মাসে ৩৭১ জন জেলের জন্য চাল বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত ৩৭১ জন জেলের মধ্যে প্রথমধাপে ৩২৫ জন জেলেকে চাল বিতরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। বাকি ৪৬ জন জেলের চাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের বিশেষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের ৪৬ জন জেলের মাঝে বিতরণ করেন। যার অফিসিয়াল কাগজপত্রসহ মাস্টাররুল উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই চাল বিতরণের সূত্র ধরে গত কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ফ্যাক আইডি দিয়ে একটি কুচক্রিমহল ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন। উক্ত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলেও দাবি তার।
তিনি আরও জানান, এরই জের ধরে গত ২৭ এপ্রিল ইউনিয়নের কার্ডধারি জেলে রাখাল মল্লিকের কাছ থেকে একরকম জোরপূর্বক চাল না পাওয়ার শিকারউক্তির ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।
খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড (লামচরি) গ্রামের জেলে রাখাল মল্লিক জানান, মেম্বার আমার চাল আমার চাচাতো ভাই সুশিল মল্লিকের কাছে প্রায় ১ মাস পূর্বে দিয়েছেন। আমার চাচাতো ভাই ভুলবশত আমাকে না বলায় আমি বুঝতে পারি নাই। আমি গত মার্চ মাসের জেলে কার্ডের ৪০ কেজি চাল পেয়েছি।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অঞ্জন কুমার সরকার জানান, আমি আমার ওয়ার্ডে জেলে কার্ডধারি ৪১জন জেলের মাঝে গত মার্চ মাসের ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছি ইউনিয়ন মৎস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চাল বিতরণের সময় রাখাল মল্লিক বাড়িতে না থাকায় তার চাল একই বাড়ির সুশিল মল্লিকের কাছে দিয়ে আসি এবং চালগুলো রাখাল মল্লিককে পৌছে দেওয়ার জন্য বলে আসি।
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক মিয়াজী জানান, নিয়ম মেনে আমার ওয়ার্ডে নিবন্ধিত ৫ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণে কোন অনিয়ম করা হয়নি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মন্জুর হোসেন রিপন জানান, আমি নিয়ম মেনে চাল বিতরণ করেছি। যারা এই অপপ্রচার করছে তারাতো আমার পরিষদেরই মেম্বার। আমি যদি কোথাও কোন অনিয়ম বা অসংহতি করে থাকি সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে বা আইনের আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু তারাতো আইনের আশ্রয় নিয়েছে। আর আমিতো অবশ্যই জবাবদিহি করবো প্রশাসনকে।
চাল বিতরণের বিষয় নিয়ে কিছু ইউপি সদস্য যেভাবে ইউনিয়ন পরিষদে এসে বিশৃঙ্খলা করেছে এটা সত্যিই দুঃখজনক। আমি যদি চাল বিতরণে কোন প্রকার অনিয়ম করে থাকি তবে আমার বিচার হবে। কিন্ত এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে একটি মহল।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা বলেন, খাদেরগাও ইউনিয়নে ৫০১ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। কিন্তু আমরা ৩৭১ জনের চাল বরাদ্দ দিয়েছি। চেয়ারম্যান দুই ধাপে যথাক্রমে ৩২৫ জন ও ৪৬ জনকে চাল দিয়েছেন। এই ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেছেন। ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে সমন্বয় না করে শুধু মাত্র ১ ও ২নং ওয়ার্ডে ৪৬ জন জেলের মাঝে বিতরণ করা কতটুকু ন্যায় সংঙ্গতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিবন্ধিত ৫০১ জেলের মধ্যে ১ ওয়ার্ডে হউক বা ৯ ওয়ার্ড হউক সেটা চেয়ারম্যানের একতিয়ার। সর্ত শুধু নিবন্ধিত জেলে হতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা হক জানান, চাল বিতরণে অনিয়মের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি ডকুমেন্টসহ জবাব দাখিল করার জন্য। জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com