শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে জন্মসনদ গ্রহণ ও সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। তবে, কিছু প্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা মানছে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নীতিবহির্ভুতভাবে শিক্ষার্থীর বয়স কমানোর প্রবণতায় পাবলিক পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ বিবেচনা করা হয় না। তাই, নীতিবহির্ভুতভাবে শিক্ষার্থীর বয়স কমানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে ও পাবলিক পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনে জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নীতিবহির্ভুতভাবে শিক্ষার্থীর বয়স কমানোর প্রবণতা রোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগকে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনে জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের এই নির্দেশনা অনুসরণ করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ভর্তির সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করা হলেও পাবলিক পরীক্ষার জন্য পঞ্চম, অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ উপস্থাপন বা বিবেচনা না করার ফলে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং শিক্ষাগত সনদে উল্লিখিত জন্ম তারিখের মধ্যে গরমিল দেখা দেয়।
শিক্ষানীতি ২০১০ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স হবে ৬ বছরের বেশি। সে হিসাবে একজন শিক্ষার্থীর ১১ বছরের বেশি বয়সে প্রাথমিক সমাপনী, ১৪ বছরের বেশি বয়সে জেএসসি এবং ১৬ বছরের বেশি বয়সে এসএসসি পাস করার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, শিক্ষানীতি এবং ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পাবলিক পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয়। পরবর্তী সময়ে পাবলিক পরীক্ষার সনদ দাখিল করে বয়স কমানোর জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ কথিত সংশোধনের আবেদন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বয়স ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত কমানোর নীতিবহির্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এ প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণ নিশ্চিত করা ও নীতিবহির্ভুতভাবে শিক্ষার্থীদের বয়স সংশোধনের প্রবণতা রোধ করার জন্য এক সভার আয়োজন করা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকারে বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন গ্রহণ, সংরক্ষণ ও পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনকালে এর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং নীতিবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীর বয়স কমানোর প্রবণতা রোধকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
জানা গেছে, সভার এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সে সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ২৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ ও সংরক্ষণ ও পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে এর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং নীতিবর্হিভুতভাবে শিক্ষার্থীদের বয়স কমানোর প্রবণতা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাদরাসা শিক্ষ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর সব মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সুপার এবং বিএমটিটিআইয়ের অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ জুন ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com