রাজশাহীতে ভিক্ষাবৃত্তির ছদ্মবেশে বিকৃত যৌনকামনায় লিপ্ত হওয়ায় এনামুল হক বুলু নামে ৬২ বছর বয়সের এক বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগরীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলেও ভিক্ষুকের ছদ্মাবরণে সড়কে চলাচল নারী-শিশু, স্কুল-কলেজগামী কিশোরী, তরুণী ও যুবতীদের যৌন হয়রানি করাই ছিল বুলুর মূল লক্ষ্য।

বুলুর ব্যক্তিগত সংসার জীবন এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট এলাকায় ছেলের বড় দোকান রয়েছে। এরপরও তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেন। তবে ভিক্ষাবৃত্তি তার পেশা নয়, নেশা।

প্রতিদিন বিকৃত যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্যই মহানগরের ব্যস্ততম সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, আরডিএ মার্কেট ও সোনাদীঘির মোড়সহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়ান এই বৃদ্ধ।

বয়সের বৃদ্ধ হলেও তার মানসিক কোনো সমস্যা নেই। তার কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও খুঁজে পায়নি পুলিশ। কেবল বিকৃত যৌনকামনা পূরণের জন্যই তিনি এ কাজটি করতেন বলে তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

ভিক্ষুকের বেশ ধরে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি করে বৃদ্ধ। মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা আরডিএ মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধ অনৈতিক কাজটি করে আসছিলেন। তার এই অপকর্মের ভিডিও গতকাল রোববার (২৪ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, ভিক্ষাবৃত্তির আড়ালে মেয়েদের কৌশলে যৌন হয়রানি করাই তার বিকৃত নেশা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, ভিক্ষাবৃত্তির নামে মহানগরীর ব্যস্ততম এলাকা আরডিএ মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বৃদ্ধ অনৈতিক কাজটি করেছেন। এতে করে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় উঠে।

ভিডিও ক্লিপটি দিয়ে সাইফুল ইসলাম দুলাল নামে ওই যুবক তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, আজ দুপুর আনুমানিক পৌনে দুইটার দিকে রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকায় এই বৃদ্ধ লোকটিকে আমি লক্ষ্য করি। লোকটি সাহায্যের জন্য মূলত নারীদের কাছে যায় এবং তাদের শরীরে স্পর্শ করে এমন ভাবে যেনও সে অজ্ঞাতসারে বা ভুল করে করে ফেলেছে। সন্দেহ হাওয়ায় তার পিছু নেই এবং একি কাজ সবার সঙ্গে করতে দেখা যায়।

লোকটি বয়স্ক, না বুঝে করছে ভেবে অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সজ্ঞানে এবং কুৎসিত লক্ষ্য নিয়েই এই কাজ করছে তা সুস্পষ্ট। তার আসল উদ্দেশ্য জানার জন্যই আমি মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করতে থাকি। কিন্তু কোনও রকম ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে ফেলি। এই লোক এবং এরকম আরও যারা আছে তাদের হতে সবাইকে সাবধান হতে হবে এবং তাদের যতো দ্রুত সম্ভব প্রশাসনের আওতায় আনার অনুরোধ জানাই। তা না হলে রোজই রাস্তায় নারীরা হেনস্তার শিকার হতে থাকবে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) ভোর পৌনে ৫টার দিকে মহানগরীর পাচানীর মাঠ এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ওই ভিক্ষুকের নাম এনামুল হক বুলু (৬২)। তিনি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালীনগর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে মহানগরের পাচানীর মাঠ শেখের চক এলাকায় তিনি পরিবার নিয়ে সেলিমের বাসায় ভাড়া থাকেন।

গ্রেপ্তারের পর তাকে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এসময় প্রেস ব্রিফিং করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ওই ভিক্ষুকের একটি ভিডিও ক্লিপ গতকাল রোববার (২৪ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

বিষয়টি পুলিশেরও নজরে আসে। এরপর তাকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে পুলিশের একটি চৌকস দল। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর রোববার রাতভর তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলে। শেষ পর্যন্ত সোমবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে মহানগরীর পাচানীর মাঠ শেখের চক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ভিক্ষুক রাস্তায় চলাচলকারী নারী-শিশুদের অভিনব কায়দায় যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। ভিক্ষাবৃত্তির ছদ্মাবরণে তিনি নারী-শিশুদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন।

এটি ছিল তার বিকৃত যৌনাচার। তাকে গ্রেপ্তারের খবরে এরই মধ্যে একজন ভুক্তভোগী নারী বোয়ালিয়া থানায় এসে তাকে শনাক্ত করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওই নারী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগও করেছেন। এই কারণে তার বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হচ্ছে। এছাড়া সড়কে যৌন হয়রানি করার ভিডিও ফুটেজটি এরইমধ্যে প্রমাণস্বরূপ পুলিশের হাতে রয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মন জানান, বুলু একজন সচ্ছল মানুষ। বৃদ্ধ হলেও হাঁটতে-চলতে তার কোনো সমস্যা নেই। এছাড়া অন্য কোনো প্রতিবন্ধিতারও তথ্য মেলেনি। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে এরই মধ্যে একজন ভুক্তভোগী নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিকেলের মধ্যেই তাকে আদালতে পাঠানো হবে।