বায়ুদূষণ: বিশ্বে পঞ্চম বাংলাদেশ
সম্প্রতি এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে রাজধানী ঢাকার নাম। গত ৪ মার্চ একিউআই রেটিংয়ে ঢাকার স্কোর ছিল ২৮৮। এর মানে ঢাকার বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর।
ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলার কারণে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে
ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলার কারণে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে
একিউআই স্কোর অনুযায়ী শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
এই যখন অবস্থা, তখন মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ার পঞ্চম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের দূষিত দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। ১৩১টি দেশের সাত হাজার ৩২৩টি স্থানে ৩০ হাজারের বেশি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
সংস্থাটির আগের বছরের প্রতিবেদনে দূষিত দেশের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
এদিকে ঢাকার বাতাস নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
মূলত বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ দেখে আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
আইকিউএয়ারের এবারের প্রতিবেদনে দূষিত দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চাদ। এছাড়া অন্য তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছে ইরাক, পাকিস্তান ও বাহরাইন।
প্রতিবেদন বলছে, চাদে দূষণের পরিমাণ ছিল ডব্লিউএইচও নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় ১৭ গুণ বেশি (৮৯ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার), ইরাকে তা ছিল ১৬ গুণের বেশি (৮০ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার), পাকিস্তানে ১৪ গুণের বেশি (৭০ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার), বাহরাইনে ১৩ গুণের বেশি (৬৬ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) এবং বাংলাদেশে প্রায় ১৩ গুণ (৬৫ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার) বেশি।
এতে বলা হয় বিশ্বের মাত্র ছয়টি (পাঁচ শতাংশ) দেশ বায়ুদূষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পিএম২.৫ নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
এছাড়া ১১৮টি দেশেই বাতাসে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর তালিকায় ভারত রয়েছে অষ্টম স্থানে। আর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৩৯টিই ভারতের। তালিকায় রাজধানী নয়াদিল্লির পাশাপাশি রয়েছে কলকাতা, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইর মতো বড় শহরগুলো।
দূষণের তালিকায় ভারতের ছয়টি মেট্রো শহর রয়েছে। দিল্লির পরেই সবচেয়ে দূষিত শহর কলকাতা। চেন্নাইয়ে দূষণ থাকলেও তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে পরিষ্কার দক্ষিণের এই শহর। তথ্য বলছে, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরুতে ২০১৭ সালের পর থেকে দূষণের মাত্রা বেড়েছে।
প্রতিবেদন বলছে- দিল্লি এখন আর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী নয়। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হয়েছে আফ্রিকার চাদ প্রজাতন্ত্রের এনজামেনা। নয়াদিল্লি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
এছাড়া শহরের নিরিখে পাকিস্তানের লাহোর ও চীনের হোতান সবচেয়ে দূষিত শহর। তারপরে রাজস্থানের ভিওয়াদি ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে দিল্লি।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com