বন্ধুর বিপদে টাকা ধার দিয়েছিলেন তাসিন। আবার প্রয়োজন হলে ধারের সেই টাকা চেয়েছিলেন। সেটাই যেন জীবনের জন্যে কাল হলো তার। পাওনা পাঁচশ’ টাকা ফেরত চাওয়ায় আট বন্ধু মিলে পানিতে চুবিয়ে নির্মমভাবে খুন করে তাসিনকে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ দেড় বছর (১৮ মাস) পর পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
শুক্রবার (৬ নভেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০১৯ সালের ১ মে জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের কাঞ্চন এলাকায় লেকের পানিতে ডুবিয়ে তাসিন নামের এক যুবককে আট বন্ধু মিলে হত্যা করেছিল। পিবিআই তাদের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
পিবিআই এর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত তাসিন হত্যা মামলার সন্দেহজনক আসামী মো.নজরুল ইসলাম(২২)কে গত ৪ নভেম্বর ভোর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআইয়ের একটি বিশেষ টিম। নজরুল ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থানার মৃত আবদুল মালেকের ছেলে। পরে নজরুলের দেয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরো চার আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই এর জেলা পুলিশ সুপার আরো জানান, গ্রেফতারের পর আসামী নজরুল পুলিশ ও আদালতে জবানবন্দি দেয় যে, খিলগাঁও রেলগেট হতে ৮নং রুটে সে সিএনজি চালায়। ঘটনার আনুমানিক ২ মাস পূর্বে তার কিছু টাকার প্রয়োজন হলে সে প্রতিবেশী বন্ধু তাসিন এর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নেয়। এর আটদিন পর তাসিন তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে নজরুল ৪/৫ দিন সময় চাইলে তাসিন তাকে গালাগালি করে এবং হুমকি দেয়। তাসিনের আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে নজরুল এর দুইদিন পর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শুক্কুর এর সাথে শলাপরামর্শ করে। এক পর্যায়ে তাসিনকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা অনুসারে ২০১৯ সালের ১মে বেলা আনুমানিক এগারোটার সময় নজরুল, তার আরো সাত বন্ধু শাওন (১৯), ইমরান (২০), শামীম (১৯), আব্বাস (১৯), তাহের, নাদিম ও শুক্কুর আলী মিলে তাসিনকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে দুইটি সিএনজি অটোরিক্সা যোগে রূপগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তারা রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের কাঞ্চন এলাকার নির্জন লেকের পাড়ে গিয়ে পৌঁছায়। একটি হোটেলে একসাথে চা নাস্তা করে তারা সবাই সিএনজি থেকে লেকের পাড়ে নামে। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাসিনকে নিয়ে ইমরান, আব্বাস, শুক্কুর, তাহের, নাদিম, শাওন ও নজরুল লেকের পানিতে নামে।
শামীম লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে থাকে। কোন লোকজন দেখলে সে সবাইকে সতর্ক করবে। এক পর্যায়ে নজরুল ও শুক্কুর অন্যান্যদের বলে ওঠে তাসিনকে ধর। তখন শাওন তাসিনের হাত জাপটে ধরে, শুক্কুর তাসিনের গলায় চেপে ধরে, ইমরান তাসিনের পা জাপটে ধরে এবং নজরুল তাসিনের ঘাড় ধরে মাথা ও মুখ পানিতে ডুবিয়ে রাখে। কিছুক্ষন পর তাসিন পানির নীচে তলিয়ে যায়। তাসিনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে লাশ লেকের পানিতে ডুবিয়ে গুম করে তারা নিজ নিজ বাসায় চলে আসে বলে আসামী নজরুল ইসলামসহ গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামী পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর আসামীদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
পিবিআই এর জেলা পুলিশ সুপার মো: মনিরুল ইসলাম জানান, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ৬:১২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২০
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com