সাবেক রাশিয়ান গুপ্তচর আলিয়া রোজা নিজের রহস্যময় জীবনের গল্প জনসমক্ষে আনলেন। কিভাবে একজন গুপ্তচর থেকে পর্যটক হয়ে ওঠেন সেই কাহিনীই জানিয়েছেন তিনি। যে ব্যাক্তিকে ফাঁদে ফেলার কথা ছিল আলিয়ার, ঘটনাক্রমে তারই প্রেমে পড়ে যান আলিয়া রোজা। তার সেই জীবনের গল্প প্রকাশ করেছে বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য সান।
বর্তমানে ৩৬ বছর বয়স্ক আলিয়া রোজা এখন ফ্যাশন জগতের মানুষ। লন্ডন, ক্যালিফোর্নিয়া ও মিলানে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেন তিনি। তিনি প্রিন্স চার্লস ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খানসহ বিশ্বের বড় বড় তারকাদের সঙ্গে ওঠা বসা তার। তবে এই সফলতার জন্য তাকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
আলিয়ার জন্ম সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে। তার বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। সেখানে তাকে একজন যৌনকর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তার দাবি, এই প্রশিক্ষণের সময় তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাকে সেখানে শেখানো হয়, কীভাবে একজন টার্গেটকে ফাঁদে ফেলতে হবে। যখন আমি রেড স্প্যারোর মতো সিনেমা দেখি তখন আমি অবাক হয়ে ভাবি, তারা কীভাবে সবকিছু জানে! কারণ, একাডেমিতে যোগ দেয়ার দুই সপ্তাহের মাথায়ই সহকর্মীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল আমাকে।
বর্তমানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক একাডেমিতে তাদেরকে শেখানো হতো কীভাবে একজন পুরুষকে যৌন আবেদন সৃষ্টির মাধ্যমে ফাঁদে ফেলতে হয়। এভাবে মূলত গোপন তথ্য উদ্ধার করা হতো। প্রথম মিশনে আলিয়াকে যৌনকর্মী সাজতে হয়েছিল। এসময় তিনি একটি বড় সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের প্রধানকে ফাঁদে ফেলে তার মাদক কারবার সম্পর্কে তথ্য উদ্ধার করেছিলেন।
তবে ২০০৪ সালে এমন এক টার্গেটকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে তার প্রেমে পরে যান আলিয়া। তিনি বলেন, সেসময় তার সঙ্গে আমি এমন জীবন পার করেছি যা ছিল আমার জন্য স্বপ্ন। তার জন্য নিজের ক্যারিয়ার ছেড়ে সন্ত্রাসের দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন আলিয়া রোজা।
আলিয়া বলেন, সেসময় আমি সন্ত্রাসীদের মধ্যে ডুবে ছিলাম। আমার ধারণা সন্ত্রাসীরা পুলিশের থেকে ভালো। রাশিয়ায় পুলিশের কোনো নৈতিকতা নেই। এর থেকে সন্ত্রাসীরা বেশি নিয়ম মেনে চলতো। ভ্লাদিমির নামের ওই টার্গেটকে আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সে আমাকে সব কিছু থেকে বের হতে সাহায্য করেছে। যদিও ৯ মাসের মধ্যেই ভ্লাদিমিরের দল টের পেয়ে যায় যে সে পুলিশের সঙ্গে যুক্ত। সেসময় তার জীবন বাঁচিয়েছিল ভ্লাদিমিরই। যদিও ওই ঘটনার কয়েক মাসের মাথায় নিজের গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতেই মারা যান ভ্লাদিমির। মারা যাওয়ার আগে আলিয়াকে তার কিছু বন্ধুর ফোন নাম্বার দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আলিয়াকেও তখন পুলিশের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর প্রয়োজন ছিল। মস্কোতে প্রায় এক বছর লুকিয়ে ছিলেন তিনি।
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ২০০৬ সালে একজনকে বিয়ে করেন সাবেক এই রুশ গুপ্তচর। যদিও সেই ব্যাক্তিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং জেলেই তার মৃত্যু হয়। তবে ভাগ্য সহায় থাকায় স্বামীর সম্পত্তি পান আলিয়া। তাদের প্লাটন নামের একটি সন্তানও ছিল। ওই অর্থ দিয়ে আলিয়া সুইজারল্যান্ড এবং পরে লন্ডন চলে আসেন। তার কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। সূত্র : দ্য সান
বাংলাদেশ সময়: ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ আগস্ট ২০২১
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com