ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে আরও ১২ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। রোববার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদের মধ্যে ৩ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৯ জন মেম্বার রয়েছেন। এর আগে গত ১২ ও ১৫ এপ্রিল আরও ৯ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে মোট ২৪ জন জনপ্রতিনিধি সাময়িক বরখাস্ত হলেন।
এদিকে শনিবার রাতে রাজশাহী গোদাগাড়ীতে ৬৭ বস্তা সরকারি চালসহ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মখদুম কবীর তন্ময়, নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর বরমহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা গোলাম হাফিজ সোহাগকে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাছাড়া নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রেজা, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জাকির হোসেন এবং ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রোকনুজ্জামান, ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আব্দুর রব পাটোয়ারী, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ মোশারেফ হোসেন এবং ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বার রনি বেগম, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আল-আমিন চৌধুরী এবং ৭, ৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বার মোছা. আছিয়া খাতুনকেও একই কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উলেস্নখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ, ভিজিডির চাল আত্মসাৎ, খাদ্য সহায়তা চাইতে আসা লোকজনকে মারধর, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে দেশের সংকটময় মুহূর্তে এলাকায় অনুপস্থিত থাকা, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় অনুপস্থিত ইত্যাদি কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ এরইমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
উলিস্নখিত চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে বর্তমানে অনিয়মের ঘটনা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
আ’লীগ নেতা কারাগারে
আমাদের রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের এক নেতাকে রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি থেকে ৬৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়।
এই নেতার নাম আলাল উদ্দিন ওরফে স্বপন। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের পরিবেশক। তার বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন তার নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।
চাল উদ্ধার করার পর শনিবার রাতেই পুলিশ তাকে আটক করে গোদাগাড়ী থানায় নিয়ে আসে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, রাতেই তার নামে মামলা করা হয়েছে। রোববার বেলা একটার দিকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকালে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা আলাল উদ্দিনের বাড়িতে অভিযানে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার ও গোদাগাড়ী থানার ওসি খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারা অভিযান চালিয়ে আলাল উদ্দিন ও তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে ৫০ কেজি ওজনের ৬৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও নাজমুল ইসলাম সরকার বলেন, কিছু বস্তায় সরাসরি সরকারি সিল দেওয়া রয়েছে। বাকি চালগুলোর বস্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে বিতরণ করার ইচ্ছা থাকলে তো আর বস্তা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে না। এই নেতা ও পরিবেশক এলাকার ৫শ কার্ডধারী মানুষের কাছে বিক্রি করার জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। তার রেজিস্টারে দেখা গেছে, ৫শ জনের মধ্যে ৪৯২ জনের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হয়েছে। রেজিস্টারে কিছু ক্রেতার স্বাক্ষরের জায়গা ফাঁকা রয়েছে। আর কিছু স্বাক্ষর দেখেই বোঝা যাচ্ছে-জাল।
ইউএনও জানান, অভিযান চালানোর খবর শুনে স্থানীয় বঞ্চিত লোকজন তার কাছে আসেন। তারা বলেন, তাদের কার্ড অনেক দিন আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের চাল দেওয়া হয় না। একজন বৃদ্ধ লোকও কাঁদতে কাঁদতে এসে একই অভিযোগ করেন।
ইউএনও নাজমুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, একজন পরিবেশকের নিজস্ব গুদাম থাকতে হবে। গুদামের সামনে সাইনবোর্ড থাকতে হবে। তার এসবের কিছুই নেই। নিজ বাড়িতে সব নিজের মতো করে রেখেছেন। তার বাড়িতে ৩৫টি কার্ড পাওয়া গেছে, যাতে কোনো স্বাক্ষর নেই। আরও প্রায় ১০০টি ফাঁকা কার্ড পাওয়া গেছে, যা ক্রেতাদের দেওয়াই হয়নি। ইউএনও বলেন, তার বাড়িতে এ রকম সরকারি সিল দেওয়া অনেক বস্তা রয়েছে। এই নেতা একেকবার একেক রকম কথা বলছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও এই নেতা ন্যায্য মূল্যের চালের পরিবেশক ছিলেন। তখনো তার বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন জেলা প্রশাসকের কাছে ন্যায্য মূল্যের চাল, কৃষি ভর্তুকির সার ও বীজ কার্ডধারী কৃষকের কাছে বিক্রি না করে আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগের এখনো তদন্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০
protidin-somoy.com | anayet mojomdar
Development by: webnewsdesign.com