ব্রেকিং নিউজ

x


চাঁদপুরে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ৩শ’ সাংবাদিক

বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০ | ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

চাঁদপুরে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ৩শ’ সাংবাদিক

চাঁদপুর: “আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা সংবাদ পৌছাবো ঘরে”। ফেসবুকের নিউজ ফিডে একজন গণমাধ্যমকর্মীর দায়িত্ববোধ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস। নিরাপত্তার কারণে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে পাঠকের সংবাদ তৃষ্ণা মেটাতে অহর্নিশ ছুটে চলা একজন খবরের ফেরিওয়ালা নিজে কতোটুকু নিরাপদ? কোন প্রকার প্রণোদনা বা সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া রাত-দিন ছুটে চলা এসব গণমাধ্যমকর্মীর পরিবারের সদস্যরা কি ঝুঁকিতে নেই!

চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় ৩ শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। বিভিন্ন উপজেলায় কোন প্রকার ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ, টেলিভিশনে লাইভে অংশগ্রহন, পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে দুস্থ-অসহায়দের খবর সংগ্রহ, গ্রামে-গঞ্জে সচেতনতা মূলক মাইকিং, ঝুঁকিপূর্ন লকডাউন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো, ঘরে থাকা লোকজনদের বাজার ও ঔষধ পৌঁছে দেয়া এমনকি কারোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নামাজে জানাজায় পর্যন্ত উপস্থিত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মরনঘাতি কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঝুঁকি কমাতে ঘোষিত লকডাউনে চাঁদপুরের সদর উপজেলা ও শহরে ১০০ জন, হাইমচরে ২০ জন, মতলব উত্তর ও দক্ষিনে ৫০ জন, ফরিদগঞ্জে ২৫ জন, হাজীগঞ্জে ৩০ জন, শাহরাস্তিতে ২০ জন ও কচুয়ায় ২০ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছে। (প্রকৃতপক্ষে জেলায় সংবাদকর্মীর সংখ্যা আরও বেশি থাকলেও বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এই সংখ্যা ধরা হয়েছে।)

পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ পৌঁছানো, নিজেদের অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ, করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ্য রোগীদের খবর প্রশাসন ও হাসপাতালে দেয়ার কাজ করে আসছেন গনমাধ্যমকর্মীরা। কোনপ্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া এসব কাজের কারণে সাংবাদিকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬ জন সাংবাদিক আক্রান্ত ও ৩ শতাধিক সাংবাদিক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার সংবাদে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব আলম লাবলু জানান, জেলায় মতলব উত্তরে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছে। কোন সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই ছুটতে হয় এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রচুর লোক মতলবে আসায় প্রতিদিন লকডাউনকৃত বাড়িগুলোর খোঁজ খবর নিতে হয়। ফলে নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে।

হাইমচর প্রেসক্লাবের সভাপতি খুরশিদ আলম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতে গনমাধ্যমকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ত্রাণ সমন্বয়ে ভূমিকা রাখছে। আমরা ব্যক্তিগত অর্থায়নে হাইমচর প্রেসক্লাবের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের ত্রাণ বিতরণে কল সেন্টারে সাংবাদিকরা কাজ করছে। ফোনকল পেয়েই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাংবাদিকরা ত্রাণ পৌঁছিয়ে দিচ্ছে।

হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, জেলার মধ্যে হাজীগঞ্জের সাংবাদিকগণ কাজে এগিয়ে, কারন হাজীগঞ্জের সাংবাদিকরা যখনই ঘটনা তখনই নিউজ পৌছে দিচ্ছে তার সংবাদপত্র বা অনলাইনে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা তাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই সাথে সহযোগীতাও করে যাচ্ছেন প্রশাসনকে।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক সকলের কন্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাত জানান, সরকারি ত্রাণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিনা পারিশ্রমিকে উপজেলার যে কোন প্রান্তে পৌঁছে দেয়া, ২৪ ঘন্টা ঔষধ পৌঁছে দেয়া, মানুষকে ঘরমুখো করতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ভলান্টিয়ারের দায়িত্বপালন, করোনায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসা লোকদের নিরাপদে রাখতে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করতে সাংবাদিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিরাতে হাজীগঞ্জ উপজেলার ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহ এই প্রসঙ্গে বলেন, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যেহেতু মফস্বল সাংবাদিকদের কোন বেতন-ভাতা নেই, অনির্দিষ্টকালের এই অচলাবস্থার সময়ে সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপনসহ সবধরনের রোজকার বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া এ দুর্যোগ মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সংবাদ দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে সংবাদকর্মীরা।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের সকল স্তরের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও সংবাদকর্মীদের সক্রীয় অংশগ্রহন রয়েছে। এক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের বিষয় ও দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে চাঁদপুরসহ সারাদেশের মফস্বল সাংবাদকিদের কথা বিবেচনা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০

protidin-somoy.com |

Development by: webnewsdesign.com