ব্রেকিং নিউজ

x


কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে

মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১ | ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে

 

মহামারি করোনা সংক্রমণ-জনিত কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দের বছর ধরে বন্ধ থাকায় ভালো নেই নরসিংদীর সাত শতাধিক কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা। অনেকেই আর্থিক অনটনের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করে দুঃসহ সময় অতিক্রম করছেন। অনেকেই সংসারের লাগাম টানতে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে ঝুঁকছে অন্য পেশায়।

সেই সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশে দিন পার করছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মচারীরা। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে নরসিংদীর সকল কিন্ডারগার্টেন। এতে ১০ হাজারের অধিক স্থানীয় শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী শিক্ষকতা করেন। বিদ্যালয়ের সামান্য বেতন আর প্রাইভেট টিউশনি ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এসব স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরা বর্তমানে কর্মহীন হয়ে আয় উপার্জন বন্ধ থাকায় তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যারা পরিচালনা করেন তারাও দের বছর ধরে প্রতিষ্ঠান ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে জেলার এই সকল কিন্ডারগার্টেনকে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকেই স্কুলের ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এসব কিন্ডারগার্টেনগুলো বেশিভাগই বাড়ি ভাড়া করা। বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে না পারায় অনেক স্কুলে এখন বাসা ভাড়া দিতে দেখা গেছে। করোনার কারণে কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় সংসারের অভাবের কারণে অনেকেই শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে দেখা গেছে।

নরসিংদী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, জেলায় ৬টি উপজেলায় ৭শত ৭৫টি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান আছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৬৫টি, পলাশ উপজেলায় ৫৩টি, মিবপুর উপজেলায় ১২০টি, মনোহরদী উপজেলায় ৯৮টি, বেলাব উপজেলায় ৫৬টি ও রায়পুরা উপজেলায় ১৮৩টি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ২ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আয়া-বুয়া ও গার্ডসহ আরও ২ জন কর্মচারী ছিল। সব মিলিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রায় আড়াই হাজারের মতো।

নতুন কুড়ি কিন্ডারগার্টেনের সহকারী শিক্ষক কামরুলজ্জামান  বলেন, শিক্ষকতা আমার নেশা ও পেশা। ছাত্র জীবন থেকেই এলাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে কামরুল মাস্টার উপাধি পেয়েছি। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে খুব হিমশিম খাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে আমি কোন কাজও পাচ্ছি না। কাউকে কাজের কথা বললে হাসাহাসি করে। কি আর বলব এখন আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। আত্মীয় স্বজনরা আগে সহযোগিতা করতো। এখন তারা নিজেরাও অসহায় আমাকে আর কী দিবে?

নরসিংদী চরাঞ্চর নজরপুর এলাকার নতুন কুড়ি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমরা যারা কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষক আছি তারা প্রতিজনই এক একজন উদ্যোক্তা। স্ব-ইচ্ছায় ছোট ছোট সোনামণিদেরকে শিক্ষা দান করি। আমাদের বেতন কিন্তু সামান্য তারপরও আমরা শিক্ষকতা করছি। করোনার কারণে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সরকার তা পূরণ করতে পারবে না। তাই আমাদের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক।

পলাশ উপজেলার ডাঙ্গার পূবালী এলাকার আর্লিবার্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ মুস্তফা ইসলাহী বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন পাচ্ছি না। ফলে শিক্ষকদেরও বেতন দেওয়া হচ্ছে না।আমার স্কুলে ৩জন কর্মচারী ও ১২জন শিক্ষক শিক্ষকতা করে আসেন। স্কুল বন্ধ থাকায় সবাই এখন কর্মহীন।

নরসিংদী সদর উপজেলার কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. শাহিনুর মিয়া বলেন, করোনা কারণে সারা দেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা দেন সরকার। স্কুল-কলেজ বন্ধ এক বছরের অধিক সময় অতিক্রম করছে। এই দীর্ঘ সময়ে সরকারের সহযোগিতা হাত ছিল অত্যন্ত প্রসারিত। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য কোন চিন্তা ভাবনা কোন নীতিমালা বা কোন পদক্ষেপ নেই। আমরা বার বার দাবি করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা যায়। দেশের বাহিরে বিভিন্নস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনার কারণে আমাদের অনেক শিক্ষক তাদের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। কেউ মুদির দোকানদার, মিল কারখানা ও রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। সরকারের কাছে দাবি এই বেসরকারি শিক্ষকদের বাঁচানোর সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।

নরসিংদী জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. মোসাদ্দেক আলী বলেন, জেলায় ৭ শতাধিকের অধিক কিন্ডারগার্ডেন প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। আমাদের কিন্ডারগার্ডেন এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে বার বার আবেদন করেও কোন সুফল পাইনি। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই যারা করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের পাশে একটু দাঁড়ান।

নরসিংদী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরীন আক্তার বলেন, কিন্ডারগার্টেনকে আমার শুধু ছাত্র-ছাত্রদের সরকারি পাঠ্যসূচীর বই বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। সরকারিভাবে এ শিক্ষকদের প্রণোদনার কোন নির্দেশনা এখনও পাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১

protidin-somoy.com |

Development by: webnewsdesign.com